ভারতের অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ
ধারণা করা হচ্ছে, এ বছরই যুক্তরাজ্যকে টপকে বিশ্বের পঞ্চম অর্থনীতির দেশ হয়ে উঠবে ভারত, যাদের রয়েছে বিশ্ব অর্থনীতির জন্য জরুরি এক বিশাল তরুণ কর্মশক্তি। শুধু গত বছরেই বিদেশি বিনিয়োগকারীরা ভারতীয় কম্পানিগুলোতে চার হাজার ৪০০ কোটি ডলার বিনিয়োগ করেছে। দেশটিতে অনেক নতুন নতুন সড়ক তৈরি হয়েছে, প্রান্তিক পর্যায়ে উন্নয়ন, গরিবদের জন্য সস্তায় রান্নার গ্যাস, গ্রামে পয়োনিষ্কাশনব্যবস্থা তৈরি, একটি একক বিক্রয় কর, প্রতিশ্রুতিশীল একটি স্বাস্থ্য বীমানীতি তৈরির মতো অনেক কাজ হয়েছে।
তবে শ্লথগতির চাহিদার কারণে এখনো দেশটিতে অনেক অর্থনৈতিক সংকট রয়েছে, পাশাপাশি রয়েছে কয়েক দশক ধরে চলা বেকারত্ব। বাড়তে থাকা অর্থনীতির সঙ্গে তাল মেলাতে হলে দেশটিকে প্রতি মাসে কয়েক লাখ নতুন চাকরি তৈরি করতে হবে, যাতে ভারতের তরুণ জনগোষ্ঠীকে সঠিকভাবে কাজে লাগানো যায়। গত মেয়াদে নরেন্দ্র মোদির সরকার এটি করতে পারেনি; কিন্তু এবার তাদের তা করতেই হবে।
এখন প্রশ্ন হলো, এই নতুন চাকরি তৈরি করতে গিয়ে ভারতকে কি অর্থনৈতিক সহযোগী দেশগুলোর সঙ্গে বাণিজ্য যুদ্ধে জড়াতে হতে পারে?
জাতীয়তাবাদের লড়াই
বিশ্বের অনেক দেশেই এখন জাতীয়তাবাদের স্লোগান শুরু হয়েছে। ডোনাল্ড ট্রাম্পের ‘মেক আমেরিকা গ্রেট অ্যাগেইন’, পুতিনের ‘মেক রাশিয়াকে গ্রেট অ্যাগেইন’, শি চিনপিংয়ের ‘চীনের মানুষের নতুন করে জেগে ওঠা’র মতো স্লোগান রয়েছে।
মোদিও তাঁর নির্বাচনের সময় হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের রাম ও এবং তাঁর রাজত্বের হারিয়ে যাওয়া গৌরবের স্লোগান ব্যবহার করেছেন। মোদি বলেছেন, ‘রাম ছিলেন একজন আদর্শ রাজা এবং তাঁর শাসন ছিল আদর্শব্যবস্থা’, ‘রাম রাজ্য ছিল আমাদের প্রতিষ্ঠাতা জনক এবং বিজেপি সরকার সেই লক্ষ্যেই কাজ করছে’ ইত্যাদি।
যদিও বিজেপি নেতারা বরাবরই বলে আসছেন যে তাঁরা সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে নন। এখন বিজেপি আবার ক্ষমতায় আসছে আর যাঁরা হিন্দু জাতীয়তাবাদী পরিচয়ের দাবি করছেন, তাঁদের পোস্টারে দেখা যাচ্ছে রামের ছবি।
শক্তিমানের রাজনীতি আর ভূ-রাজনৈতিক গুরুত্ব
মোদিকে নিজেদের ম্যানিফেস্টোতে শক্তির প্রতীক হিসেবে তুলে ধরেছে বিজেপি, বিশেষ করে পাকিস্তানে জঙ্গিঘাঁটিতে অভিযান চালানোর পর। আগের কয়েকটি রাজ্য নির্বাচনে মোদির জনপ্রিয়তা কমে গেলেও ওই হামলার পর তাঁর জনপ্রিয়তা অনেক বড়ে গেছে।
তাঁর সমর্থকরা বরাবরই তাঁদের ভাষায় নেহরু-গান্ধী পরিবারের বাইরে তৃণমূল থেকে নিজের চেষ্টায় তাঁর উঠে আসার বিষয়কে তুলে ধরেছেন।
সাধারণ ভারতীয়দের কাছে তুলে ধরার চেষ্টা করা হয়েছে যে, তিনি একজন একনিষ্ঠ, কঠোর পরিশ্রমী আর চৌকস ব্যক্তি। তাঁর নেতৃত্বে ভারত দুইবার পাকিস্তানকে মোকাবেলা করেছে আর একবার চীনকে, যারা এই অঞ্চলের অন্য দুই পারমাণবিক শক্তিধর দেশ।
বিশেষ করে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের অনুপস্থিতিতে আস্তে আস্তে চীনের পাল্টা শক্তি হয়ে উঠছে ভারত, বলছে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক থিংক ট্যাংক কাউন্সিল অন ফরেন রিলেশন্স।
দ্বিতীয় মেয়াদেও যদি মোদি ভারতীয় প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা অব্যাহত রাখেন, তাহলে হয়তো দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় ভূ-রাজনৈতিক জোট এবং বন্ধুত্বের পালাবদল দেখা যেতে পারে।
ডানপন্থীদের উত্থান ও জনপ্রিয়তা
জনপ্রিয় স্লোগান এবং ধারণা নিয়ে ডানপন্থী রাজনীতি করছে বিজেপি। যখন অভিবাসীদের ‘পশু’ বলে বর্ণনা করেন ডোনাল্ড ট্রাম্প, তখন বিজেপি প্রেসিডেন্ট অমিত শাহ অবৈধ অভিবাসীদের বর্ণনা করেছেন ‘তেলাপোকা’ বলে এবং তাদের বঙ্গোপসাগরে ছুড়ে ফেলার অঙ্গীকার করেছেন। পাশাপাশি তিনি হিন্দু আর বুদ্ধ শরণার্থীদের নাগরিকত্ব দেওয়ারও প্রস্তাব করেছেন।
উত্তর প্রদেশে বিজেপির মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ বলেছেন, কংগ্রেস সবুজ ভাইরাসে সংক্রমিত হয়েছে। (সবুজ বলতে ইসলামকে বর্ণনা করা হচ্ছে।)
গত পাঁচ বছরে বিজেপির শাসনামলে ভারতে হিন্দু-মুসলিম সম্পর্ক সবচেয়ে অবনতি হয়েছে এবং দেশটিতে নিজেদের ভবিষ্যৎ নিয়ে মুসলমানদের মধ্যে শঙ্কা তৈরি হয়েছে।
হয়তো নির্বাচনে জয়ের কৌশল হিসেবেও বিভেদের এসব স্লোগান নেওয়া হতে পারে; কিন্তু সেখান থেকে ফিরে আসাটা কঠিন। আর বাস্তবতা হলো, জনপ্রিয় নেতারা সাধারণত সংখ্যাগরিষ্ঠ মতের সঙ্গেই থাকেন। ফলে প্রশ্ন হলো, তাঁরা কি আসলে কখনো সেখান থেকে ফিরতে চাইবেন কিনা?
জলবায়ু পরিবর্তন
গ্রিনপিস অ্যান্ড অ্যানালাইসিসের মার্চ ২০১৯ সালের রিপোর্টে বায়ুদূষণের দিক থেকে বিশ্বের সবচেয়ে ৩০টি দেশের মধ্যে ভারতের অবস্থান ২২তম।
যদিও চীনের জনসংখ্যাকে ছাড়াতে ভারতের আরো পাঁচ বছর সময় লাগবে, তবে বিশ্বব্যাংক সতর্ক করে দিয়েছে, সামনের বছর নাগাদ ভারতের পানি, বাতাস, মাটি এবং বনের ওপর চাপের দিক থেকে দেশটি বিশ্বের শীর্ষে উঠে যাবে।
একই সঙ্গে বিশ্বের সবচেয়ে দ্রুতবর্ধনশীল অর্থনীতি, ঘন অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড আর লাখ লাখ মানুষের দারিদ্র্যসীমার নিচে থাকার বিষয়টি নরেন্দ্র মোদিকে কঠিন সংকটের মুখে ফেলতে পারে। সূত্র : বিবিসি।
Post a Comment