চাঁদপুরের হাজীগঞ্জ উপজেলায় নিরাপদ মাতৃত্ব নিশ্চিত করার লক্ষ্যে সরকারিভাবে ইনোভেশন কার্যক্রম চলছে। এর আওতায় ২০১৭ সাল থেকে মায়েদের স্বাভাবিক প্রসব উৎসাহিত করা হচ্ছে। কিন্তু চিকিৎসকদের লোভে এই কার্যক্রম শতভাগ সাফল্য অর্জন করতে পারছে না।

উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কার্যালয়ের সূত্রে জানা যায়, ২০১৭ সালে উপজেলায় সিজারিয়ান প্রসবের হার ছিল ৪১ শতাংশ। এটা রোধকল্পে উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তার কার্যালয় ইনোভেশন কার্যক্রম শুরু করে। এর লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য ২০১৯ সালের জুনের মধ্যে সিজারের হার কমিয়ে ২৫ শতাংশে আনা। এর আওতায় উপজেলার সব গর্ভবতী মায়ের সঠিক ও নির্ভুল তালিকা, ‘প্রেগন্যান্ট মাদার রেজিস্ট্রেশন সফটওয়্যারে’ তথ্য যুক্ত করা, সেবাদানকেন্দ্রগুলোর অবকাঠামোগত উন্নয়ন এবং প্রশিক্ষণের মাধ্যমে সেবা প্রদানকারীদের দক্ষ করে গড়ে তোলা। ইউনিয়নভিত্তিক স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণকেন্দ্র এবং উপজেলার আটটি স্যাটেলাইট ক্লিনিকসহ মোট ৯টি স্থানে মায়েদের উপস্থিতিতে গর্ভকালীন সময়ে অন্তত চারবার সেবা নিশ্চিত করা। একইভাবে এলাকা বা মহল্লাভিত্তিক গর্ভবতী মায়েদের নিয়ে নিয়মিত উঠান বৈঠক করা। গর্ভতালিকা অনুযায়ী সম্ভাব্য প্রসব তারিখ অনুযায়ী সরাসরি ও মোবাইল ফোনে যোগাযোগ, নিরাপদ প্রসবের জন্য ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রে তালিকা, প্রতিমাসে প্রকৃত প্রসবের তালিকা করা, গর্ভবতী মায়ের সিজারের তারিখ, ওই মায়ের বাড়ির ঠিকানাসহ অন্যান্য তথ্য সংগ্রহ করে ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণকেন্দ্রে জমা রাখা। কোথায় আর কোন কেন্দ্রে কিভাবে ওই মা সন্তান প্রসব করেছেন, তার একটি তালিকা করা হয়ে থাকে। এভাবে সংশ্লিষ্ট স্বাস্থ্যকেন্দ্রে রোগীকে সেবা দেওয়ার জন্য যোগাযোগ অব্যাহত রাখা হয়ে থাকে। গর্ভবর্তী মা স্বাস্থ্যকেন্দ্রে বিমুখ হলে তাঁকেও নিয়মিত পরামর্শ দিয়ে হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। বেসরকারি হাসপাতালে গর্ভবতী মা চলে গেলে তার কারণ নির্ধারণ করা হচ্ছে এই ইনোভেশন কার্যক্রমের মাধ্যমে। এর মাধ্যমে আংশিক সাফল্যের দেখা পেয়েছে সরকারের উপজেলা পর্যায়ের এই দপ্তরটি।
গত এপ্রিল ৪১৩ জন মায়ের প্রসবের সম্ভাব্য মাস ছিল। প্রসব হয়েছে ৪১৭ জনের। এর মধ্যে সিজারে ১৬৮, বাড়িতে ১৩১, অন্যান্যে ৫৮ এবং ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণকেন্দ্রে ৬০টি স্বাভাবিক প্রসব হয়েছে।
হাজীগঞ্জ উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা মো. গোলাম মোস্তফা জানান, ইনোভেশন কার্যক্রমের উদ্দেশ্য হচ্ছে গর্ভবতী মায়েদের নিরাপদ এবং জটিলতামুক্ত স্বাভাবিক প্রসবের ব্যবস্থা করা। এতে একদিকে মায়েরা শারীরিক জটিলতা থেকে মুক্তি পাবে, অন্যদিকে আর্থিকভাবে তারা ক্ষতিগ্রস্ত হবে না। মা ও শিশু সুস্থ থাকবে। মা ও শিশু সুস্থ থাকলে, ভবিষ্যৎ সুন্দর হবে। তিনি বলেন, ‘ইনোভেশনে শতভাগ সফলতা আসেনি। এর কারণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে—পারিবারিক অসচেতনতা, বেসরকারি হাসপাতাল ও কিছু চিকিৎসকের অর্থলোভী মনোভাব এবং নৈতিকতার ঘাটতি।’
হাজীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) বৈশাখী বড়ুয়া বলেন, ‘উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা বিভাগ নিরাপদ মাতৃত্বের যে কার্যক্রম নিয়েছে তা প্রশংসনীয়। এই কাজে উপজেলা প্রশাসনের সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে।’

Post a Comment

Previous Post Next Post