এত দিন তিনি কোথায় ছিলেন? কারা তাঁকে আটকে রেখেছিল? কেন আটকে রেখেছিল? এসব প্রশ্নের উত্তর জানা যায়নি।নাটোরের সাবেক যুবলীগকর্মী জামিল হোসেন মিলন নিখোঁজের তিন মাস ২৩ দিন পর ফিরে এসেছেন। গতকাল বৃহস্পতিবার ভোরে তিনি বাড়ি ফেরেন।

মিলন শহরতলির তালতলা হাফরাস্তার এমদাদুল হক মিয়াজির ছেলে। নিখোঁজের সময় তিনি আওয়ামী লীগ থেকে সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদে মনোনয়ন চেয়েছিলেন। কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের কাছে মনোনয়ন চেয়ে আবেদনও করেছিলেন। কিন্তু কেন্দ  সিদ্ধান্ত দেওয়ার আগেই নিখোঁজ হন। এ সময় তাঁর বাবা নাটোর থানায় জিডিতে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পরিচয়ে তাঁকে তুলে নিয়ে যাওয়ার কথা উল্লেখ করেছিলেন। তবে মিলনের নামে সদর থানাসহ বিভিন্ন থানায় অস্ত্র, মাদক, সরকারি কর্মকর্তাকে মারধর এবং সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের ১৩টি মামলা রয়েছে।
ছেলে নিখোঁজের পর এমদাদুল হক মিয়াজি নাটোর প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলন এবং থানার জিডিতে অভিযোগ করেন, র‌্যাব পরিচয়ে সাদা পোশাকের একটি দল গত ৩ ফেব্রুয়ারি মধ্যরাতে হাফরাস্তা এলাকা থেকে তাঁর ছেলেকে তুলে নিয়ে যায়। তাঁর সন্ধানের দাবিতে এলাকাবাসী মহাসড়ক অবরোধ, লাগাতার মানববন্ধন কমসূচি ও সমাবেশ করে। এলাকাবাসীর ব্যানারে স্থানীয় আওয়ামী লীগ দফায় দফায় মানববন্ধন করে।
বাড়ি ফিরে আসার পর গতকাল সকালে মিলন সাংবাদিকদের জানান, কারা তাঁকে অপহরণ করে নিয়ে গিয়েছিলেন সে বিষয়ে তিনি কিছুই জানেন না। তাঁকে ৪ ফুট দৈর্ঘ্য ও ৪ ফুট প্রস্থ একটি অন্ধকার ঘরে রাখা হয়েছিল। খাবার দেওয়া হতো দরজার নিচ দিয়ে। গত বুধবার রাতে তাঁর হাতে দুই হাজার টাকা দিয়ে ঢাকার আব্দুল্লাহপুর এলাকায় ছেড়ে দেওয়া হয়। পরে তিনি বাস ধরে বৃহস্পতিবার ভোরে বাড়ি ফেরেন।
গতকাল এমদাদুল হক মিয়াজি দাবি করেন, ‘ছেলেকে তুলে নিয়ে যাওয়ার পরে আমি যাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছি, তারা প্রত্যেকে বলেছেন মিলন বেঁচে আছে। ও ফিরে আসবে। আমরা সে আশায় বুক বেঁধেছিলাম। ছেলেকে ফিরে পেয়ে খুশি।’ একই সঙ্গে তিনি দাবি জানান, এই তিন মাস ২৩ দিন যারা তাঁর ছেলেকে বন্দি করে রেখেছিল সে বিষয়ে অনুসন্ধান করতে হবে পুলিশ ও প্রশাসনকে।
মিলনের বোন আকলিমা খাতুন বলেন, ‘ভাইকে ফিরে পেতে কত জায়গায় গিয়েছি, কত আহাজারি করেছি। অবশেষে আমার ভাইকে ফিরে পেয়েছি।’
এ বিষয়ে নাটোর সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আবুল হাসনাত বলেন, ‘মিলন ফিরে আসার পর পুলিশের পক্ষ থেকে যোগাযোগ করা হয়েছে। আমরা তার জবানবন্দি শুনে আদালতে হাজির করব।  অন্যদিকে মিলনের দেওয়া তথ্য অনুসারে অনুসন্ধান করা হবে।’

Post a Comment

Previous Post Next Post